"আল্পনার কবিতার ব্লগজিনের প্রথম সংখ্যা "
ভাষা সংখ্যা:
সূচিপত্র:
মানসাই পর্ব
সন্তোষ সিংহগফ্ফার উদ্দিন আহমেদ
তোর্সা পর্ব
সুবীর সরকারঅজিত অধিকারী
শৈলেন দাস
জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ
তিস্তা পর্ব
মনোজ পাইনবিবেক কবিরাজ
নির্মাল্য ঘোষ
মুজনাই পর্ব
কাজী রুনানায়লা খানমঅনিমেষ সরকার
গঙ্গা পর্ব
দেবাশিস বসু
সুনন্দা হালদার
সনাতন কুন্ডু
সম্পাদকীয়
২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস।মাতৃভাষার ইজ্জত আর অস্তিত্ব নিয়ে কোনো আপস নয়;-তাই তো মায়ের সন্মান বাঁচাতে আমরা হারিয়েছিলাম তাজা তাজা প্রাণকে। সালাম,রফিক,বরকত,সফিউর,জব্বারের বলিদানে রাজপথ হয়েছিল রাঙা।অঝোরে কেঁদেছিল মা।বিনিময়ে মুখের ভাষা।মায়ের ভাষা।
আল্পনার কবিতার ব্লগজিন একটি নবতম প্রয়াস।ভাষা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের এই সংখ্যা। প্রথম সংখ্যা।যথাযথ লেখাকেই ব্লগে স্থান দেওয়া হয়েছে। আপনাদেরসুচিন্তিত মতামতের অপক্ষায়।
কবিতায়: মানসাই পর্ব
একইশে ফেব্রুয়ারি
সন্তোষ সিংহ
মুখের ভাষা আঈয়ের বুলি
প্যাটের চাউল আটা
হাতের ভাষা কাজ কামাই
ঠ্যাঙের ভাষা হাটা !
চৌখের ভাষা চৌখের জল
বুকের ভাষা দরদ
পেরাণের ভাষা হাতের নাড়ি
দেহার ভাষা ঘরত !
এইল্লা ভাষা একটে করি
হামরা কবার পারি
এইল্লা আসল মাতৃভাষা
একইশে ফেব্রুয়ারি !
অমর একুশে ফেব্রুয়ারী
গফ্ফার উদ্দিন আহমেদ
ছালাম বরকত জব্বার রফিক - - -
তোমাদের আত্মবলিদান ভুলিনি
বারবার ফিরে আসে একুশে ফেব্রুয়ারী
প্রথম ভাষা শহীদ হলো মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক
জন্ম নিল এক স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ
ভাষার দাবিকে মূলধন করে
" আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতি "
প্রতিক্ষণ সতর্ক সাইরেন শুনি
মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে পারছি কী ?
যখন ভিনদেশী ভিনপ্রজাতির পাখির বুলি
শুনতে নকল করতে ঢের ভালোবাসি !
মাকে মা বাবাকে বাবা বলতে দ্বিধাগ্রস্থ কেন জিহ্বা
কোন সংস্কৃতির কোলে খেলতে উদগ্রীব আমরা ?
মাতৃভাষা দিবস --- আ-মরি বাংলা ভাষা
মহান একুশের হাত ধরেই চলবে তার অন্তহীন ধারা !
কবিতায়: তোর্সা পর্ব
কান্না
ক্যাম্পফায়ারের রাতে খুব কান্না উঠে আসছিল
চুপচাপ কথার উনুনে গুঁজে দিচ্ছিলাম
কাঠ
দ্রুত দূরে সরে গেলে তুমি!
এদিকে গলায় মাফলার জড়িয়ে ড্যান্সবার থেকে
বেরিয়ে আসে নর্তকীরা।
আমার খামারবাড়ির দরজায় শকুন বসে
থাকে
দাঁড়কাকের ছবি তুলে রাখি।
কুয়াশায় ডুবে যাওয়া সাঁকো আর শীতল করতল
নিয়ে আবার খুঁজতে শুরু করি
একটা হাডুডু খেলার মাঠ।
সুবীর সরকার
ক্যাম্পফায়ারের রাতে খুব কান্না উঠে আসছিল
চুপচাপ কথার উনুনে গুঁজে দিচ্ছিলাম
কাঠ
দ্রুত দূরে সরে গেলে তুমি!
এদিকে গলায় মাফলার জড়িয়ে ড্যান্সবার থেকে
বেরিয়ে আসে নর্তকীরা।
আমার খামারবাড়ির দরজায় শকুন বসে
থাকে
দাঁড়কাকের ছবি তুলে রাখি।
কুয়াশায় ডুবে যাওয়া সাঁকো আর শীতল করতল
নিয়ে আবার খুঁজতে শুরু করি
একটা হাডুডু খেলার মাঠ।
ভাষার নাম
অজিত অধিকারী
মনুষের চোখের জলে যে ভাষা ফুটে ওঠে
তাকে তুমি কী নামে ডাকবে?
যে নদী নিঃশব্দে ছুটে চলে সাগরের দিকে
তার এই চলন্ত ভাষার কী নাম হবে , মানুষ?
দেশের সীমান্তে যে সৈনিক বলি হয়
তার মৃতমুখে কী ভাষা চিহ্নিত আছে?
ভাষার চেয়ে সংকেত বেশি বাঙময়
তবে এ কথা ঠিক
মানবিকতার ভাষা উচ্চারিত হলে
নদীও প্রেমিকা হয়
মাঠে মাঠে শোনা যায় ফসলের গান
যে অতল ছুঁয়ে থাকে মহাগাননিক
দলছুট বূক্ষের মাঝে
স্তব্দতায় শোনো তুমি তার বুকে কী ভাষা বাজে
দুখিনী বর্ণমালা ও আমি
দীন দুখিনী মায়ের কোলের স্বর্গ আরেক নাম,
সব হারোনোর ব্যথানাশি চির শান্তি ধাম ।
জাদুকাঠির স্বপ্ন ছোঁয়ায় আমার কলম হেসে
কানামাছি, চু-কিত্কিত্ খেলে ভালোবেসে ।
সত্যি কথা হয়নি বলা, ঘেমো আঁচল ঢাকা
বর্ণমালার সুধাগন্ধে আমার বেঁচে থাকা।
বুকের ওমে প্রদীপ শিখা রাখছি আজও জ্বেলে,
ঘুমের আগে মায়ের মুখে সে গান শুনব বলে---
"আয়রে আমার নিন্দবালি, আয় আয় আয়,
আমার সোনার বাচ্চা বাপোই নিন যাবার চায়" ।
শৈলেন দাস
দীন দুখিনী মায়ের কোলের স্বর্গ আরেক নাম,
সব হারোনোর ব্যথানাশি চির শান্তি ধাম ।
জাদুকাঠির স্বপ্ন ছোঁয়ায় আমার কলম হেসে
কানামাছি, চু-কিত্কিত্ খেলে ভালোবেসে ।
সত্যি কথা হয়নি বলা, ঘেমো আঁচল ঢাকা
বর্ণমালার সুধাগন্ধে আমার বেঁচে থাকা।
বুকের ওমে প্রদীপ শিখা রাখছি আজও জ্বেলে,
ঘুমের আগে মায়ের মুখে সে গান শুনব বলে---
"আয়রে আমার নিন্দবালি, আয় আয় আয়,
আমার সোনার বাচ্চা বাপোই নিন যাবার চায়" ।
আমার মায়ের ভাষা আমার মা
জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ
আমার পড়শি পাখিরা নিত্য যে ভাষায় গান গায়
প্রিয় জানলায় নিয়ে আসে নকশিকাঁথার ভোর
সেই একই ভাষায় মায়ের নরম হাতের কাঁকন বেজে ওঠে রিনিঝিনি
আমার প্রতিবেশী বাগানে যত ফুল ফোটে
তার অস্ফূট শব্দের ভেতর থেকে উঁকি মারে
আমার প্রিয় বর্ণমালা
এই স্পর্শময় সুর ও শব্দের মূর্চ্ছনা নিয়ে শুরু হয় আমার প্রতিটি যাপন
আমার বাংলার আবহমান কালের নিত্য আলাপন
এইভাবে আমার যাপনের প্রতিটি ক্ষণ-যাত্রায়
আমার মা লেগে থাকে
মায়ের মুখের ছড়া রণিত হতে থাকে আমার সমস্ত দিনের ব্যস্ত প্রহরে :
‘’সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন যেন আমি ভালো হয়ে চলি ...!”
আমার সত্তার ভেতরে অ আ ক খ - র সুরধ্বনি বাজতে থাকে
ভাবনার কোশে কোশে অবিরাম আত্মবিশ্বাসের শ্বসন
আমার অজান্তে কাজ করে যায় বর্ণমালার আদর ও শাসন
সে আমার মা সে আমার বাংলা ভাষা
আমার মায়ের ভাষাই আমার মা
আমার মায়ের ভাষাই আমার আত্মার ধ্বনি প্রতিধ্বনি
আমার থেকে কেউ তাকে আলাদা করতে পারেনি
আমার থেকে কেউ তাকে ছিন্ন করতে পারবে না
হে মাতৃভাষা, তুমি আছো বলেই এই আমার বেঁচে থাকা
তুমি আছো বলেই তোমার বর্ণমালায় আমার জেগে ওঠা
হে মাতৃভাষা, তোমার কাছে এ আমার প্রাণের আরতি
হে মাতৃভাষা, তোমার চরণে এ আমার আমৃত্যু প্রণতি
কবিতায়: তিস্তা পর্ব
মাতৃভাষা
মনোজ পাইন
আমি অন্যভাষ হলে মা কাঁদবে? তেমন লক্ষন
আমি দেখিনা কোনো মায়ের চোখে। তাদের চোখে বিদেশী ভাষার গর্ব
প্রেমিকাকে গুনে গুনে একশো আটটা গোলাপ
দিতে দিতে বলেছিলাম-আই লাভ ইউ।সে একবারও বলেনি-'ভালোবাসি'। বরাবর বলেছে
-লাভ ইউ
অথচ সেদিন যখন কুয়াশা আর রোদ মাখামাখি
করে দাঁড়িয়ে ছিল একটা ওদালগাছ, বনপাহাড়ির
নদী যখন বেজে চলছিল মৃদু কীর্তনের সুরে
সকাল বেলার প্রেমিক রোদ উঁকি দিলে আমার
নাবাল বারান্দায় ঠিক তখনি আমাকে পেয়ে বসলো মায়া!
সেই মায়ায় আমি গাছ কে 'গাছ', নদীকে 'নদী'
বললাম।কীর্তনের সুরে গাইলাম পদাবলি!
আসলে মায়ার উচ্চারণে আর যা হোক অন্যভাষা
চলে না।যেমন' মা 'ডাকতে গেলে নিখাদ ভালোবাসায় ভাসতে হয় তেমনি মায়ার উচ্চারণে
লাগে মাতৃভাষা।
বিবেক কবিরাজ
বাংলা আমার মাতৃভাষা বাংলা গানের রেশ,
বীর শহীদদের রক্তে স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ।
যাদের রক্তে হয়ে ছিল লাল বরাক উপত্যকা,
শহীদ হয়ে এনে দিলেন বিজয় রথের চাকা।
জগত সভায় শ্রেষ্ঠ হোক বাংলা ভাষার মান,
এই ভাষাতেই ভারতবাসী গাহেন রাষ্ট্র গান।
অমর একুশে
নির্মাল্য ঘোষ
যে বীজ সেদিন শহীদ হল কবরে...
আজ বসন্ত বৃক্ষ...
সূর্য্য ধরে রাখে ডালপালায়...
যুদ্ধাক্রান্ত শহর জানে না ইতিহাস কালো কবর ফুঁড়ে সবুজ পাতা মেলে অনায়াসে...
হৃদপিণ্ডে জড়ানো আবেগ ডালপালায় লুকোনো বিস্ফোরণ ঘটায়..
কাণ্ড বেয়ে ওঠে রাষ্ট্রভাষা..
ভোরের রক্তিম সূর্য হলুদ পাতায় সবুজ মাখায় অজান্তে ...
পাখি বাংলায় গেয়ে ওঠে..
"আমি তোমায় ভালোবাসি...."
কবিতায়: মুজনাই পর্ব
অমর্ত্য আগুন
কাজী রুনালায়লা খানম
একবার তোমাকে দেখি
একবার মিছিলের মুখ
শিকড়ের অধিকার পেতে
প্রাচীন বৃক্ষের জন্য পেতে দাও বুক
একবার তোমাকে দেখি
একবার দুর্নিবার দু পায়ের তেজ।
কারা হাঁটে পায়ে পায়ে
কার হাতে রেখে যাও
অলিখিত আগুনে দস্তাবেজ!
বেজান চোখের তারায়
লিখে রাখো ইস্তাহার শাণিত আখরে
আজন্ম সন্ন্যাসী! তোমার কমন্ডলু হতে
রুখাসুখা আশ্বিনের প্রখর মৃত্তিকায়
অবিরল শান্তিজল ঝরে।
গুছিয়ে রেখেছো অনাবিল কলসজল নিপাট প্রস্তরে
অযুত দ্রোহকাল, অখন্ড কালঘূর্ণি নিজস্ব মর্মরে।
অথচ ভেতরঘর পরিপাটি আলোর উঠোন।
আনকোরা ভালোবাসা নরম চাদরে।
মুঠো মুঠো ছড়িয়ে রেখেছো অতুল্য বৈভব...
সমস্ত আগুন ও ছাই অন্তর্গতে রেখে
ধুলোপায়ে হেঁটে যাও ধ্যানমগ্ন একাকী ঈশ্বর।
অমর্ত্য আগুন টুকু চেনালেই যদি
পোড়াও পোড়াও তবে আমার আমিকে।
সুনামি
অনিমেষ সরকার
তিন চারজন মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমার কাছে কিছু পরে থাকে না
সাদা ভাত ,
বন্যায় ভাষা মায়ের সহজপাঠ
খিদে লেগে যায়। বাবা তাবিজ পরে ঈশ্বর ডাকেন
সারাদিন এককভাবে ত্রাণশিবিরে বসে থাকি
খিচুড়ি আসে
আমাকে গলা পর্যন্ত গিলতে হবে
মায়ের সহজপাঠ ভেসে গেছে
বন্যায় শেষে যদি বেঁচে ফিরি
মা অ আ শিখে নিজের নাম সই করতে শিখবে..
আগে ভাত চাই!শিক্ষা একটু পরে হলেও কেউ মরবে না
ত্রিপল দেবেন বাড়ির ছাদে টাঙিয়ে
অক্ষর শেখাবো মাকে ...
কবিতায়: গঙ্গা পর্ব
সংগ্রামে ভাষা উর্দির সাথে
দেবাশিস বসু
শিকড়টা ছড়িয়েছিল ইতিহাসের ধূসরতায়
রাজপথ রক্তে ভেসেছিল
সবে বসন্ত এসেছিল
শিমুল পলাশ মাদারের লালে ছিল উন্মাদনা
কুটো মুখে নিয়ে পক্ষীমাতার উড়ানে ছিল দুঃসাহস
মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে বারো নম্বর শেডের
বারান্দা ভেসে গিয়েছিল রক্তের প্লাবণে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই গড়িয়েছিল পথের ধূলায়
ডাক্তার হাতে করে বয়েছিল গুলিতে ছিটকানো মগজ-
মগজহীন রফিক ছাত্রাবাসের সতেরো লেখা ঘরে
সালাম তো ছিল এক সামান্য পিয়ন
কলকাতায় বন্দর কর্মী
স্কুলের গণ্ডিও সে ছাড়ায়নি
সেই তো বুঝেছিল মায়ের ব্যথা
গুলিবিদ্ধ দেড় মাস শায়িত হাসপাতালে
এক মুঠো ফুল দিও
আজিমপুরের সাড়ে তিন হাত ভূঁয়ে
হাইকোর্টের কেরানী বা প্রাথমিক পাশ কৃষিজীবী জব্বার
তারাও তো মায়েরই সন্তান
হৃদয় জ্বলেছিল মায়ের অপমানে
উর্দির সাথে ভাষার মৃত্যুসংগ্রামে
তারা আমার মুখের কথা কেড়ে নিতে চেয়েছিল
কচ্ছপের মতো আমি আমার বাড়ী পিঠে করে ঘুরে বেড়াই
আমার বাড়ী আমার ভাষা
গোপনে নিঃসৃত দুগ্ধধারার সাথে
এ ভাষা আমার মায়ের নাড়ি
সময়ের সাথে ঝাপসা হয়ে আসে স্মৃতি
তবুও তুমি জীবন্ত আমার ভাষায়
শিশুর লালাগ্রন্থির জারকে ভেজানো
ঐ আঠালো স্মৃতিই আমার ভাষা
লুকোনো আচারের বয়ামে
পকেটের আধ খাওয়া পেয়ারায়
কিশোর প্রেম বানভাসি বিচ্ছেদ
আর প্রথম মৈথুনের উচ্ছ্বাসে ছিল আমার ভাষা
বাড়ী থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুঁজে পাই অচিন শব্দের মিছিল
এমনই মুখোমুখি আমার ভাষা অচেনা শব্দ জটিল
পালী মাগধী মৈথিলী অবহট্ট হয়ে
হাজার বছরের ধূসর ইতিহাসে
হয়তো ভালোবেসেছিল বানজারা পরদেশীকে
কিছু মিশে গিয়েছিল শরীরে
কিছু শব্দসন্তান হারিয়ে গিয়েছিল বিস্মৃতির অন্ধকারে
তাল তমাল হিজলের ফিসফাসে আমার ভাষা
আলগোছে ঘোমটা সরানো বধূর
চাল ধোয়া জলের ধূসরতায়
পিদিমের স্নিগ্ধ আলোয় তুলসীতলায়
শিউলি ফোটার শব্দে শিশিরের ছোঁয়ায়
মাটির নিঃশ্বাসে বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা শুষে নেওয়ায়
শেষ বিকেলে রোদের ছায়ায় বকের ডানায় আমার ভাষা
কালোচোখ তালপুকুরের ভাবসমাধিতে আমার ভাষা
সন্ধ্যায় পথহারানো হাঁসের কাতর ডাকে আমার ভাষা
ফাগে ঢাকা কিশোরীর লজ্জালাল মুখে আমার ভাষা
পায়ে পা ঘষা আলোছায়া চুম্বনে আমার ভাষা
একুশে ফেব্রুয়ারীর রক্তরাঙা দুপুরে ছিল তার আভাস
হলুদ ব্যাকরণ বইতে নয়
সালাম বরকত রফিক শফিক জব্বারের সমাধিতে পাবে তাহার ইতিহাস
অমর আট
সুনন্দা হালদার
সালাম রফিকের খুনে
সেদিনও আগুন ছিল পলাশে
বর্ণমালার ছেঁড়া কাঁথায় তুমি ছিলে মুখ গুঁজে
যুদ্ধ শেষে চোখ মেললে সোনার অক্ষরে
জয়ী হলে, মানী হলে কি ?
সাগর পারের তাঁবেদারে আধুনিকা আজও বলে…
'আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।'
কপাল থেকে খসে পড়ে অ আ ক খ র ওড়না
আমি, আমরা, ভীন্ গোত্রের লোক
ঢুকে পড়ি তোমার ক্ষেতে
কেন, কেন জানো রানী ?
কথাচন্দনে তোমার ঘা শুকোতে
জন্ম অধিকারে তুমি আমার,
তুমি বাঙালীর, তুমি বাংলার।
স্মরণীয় একুশ
সনাতন কুন্ডু
একুশ তুমি বঙ্গভূমির সকলের মনের আশা
একুশ তুমি নব জন্মদাতা বিশ্বে বাংলা ভাষা ।
একুশ তুমি মাতৃভাষার যতসব বাঙালির গর্ব
একুশ তুমি চোখ রাঙানো নীতিকে করলে খর্ব ।।
একুশ তুমি শেখালে মোরা বাঙালি লড়তে পারি
একুশ তুমি স্মরণীয় সেই বাহান্ন'র ফেব্রুয়ারী ।
একুশ তুমি বুলেট বিদ্ধ বাঙালির রক্তাক্ত লাশ
একুশ তুমি বিশ্বজয়ী বাংলা বিশ্ববাসীর বিশ্বাস ।।
একুশ তুমি নীরব সাক্ষী সরকারি গোলাগুলি
একুশ তুমি অন্তরেতে চাও বাংলায় কথা বলি।
একুশ তুমি রক্তাক্ত লড়াইয়ের বাংলার ইতিহাস
একুশ তুমি প্রাণে জুগিয়েছো বাংলা ভাষার শ্বাস ।।
একুশ তুমি ভাষা সংগ্রামে চালিয়েছো বিজয়রথ
একুশ তুমি দেখিয়েছো বিশ্বকে বাংলা ভাষার পথ।
একুশ তুমি স্মৃতিচারণার যত বীর শহীদদের নাম
একুশ তুমি বঙ্গের রফিক, বরকত,জব্বার,সালাম ।।
একুশ তুমি মা বোনেদের মনে অশ্রুসিক্ত দিন
একুশ তুমি বাঙালির মনে রবে চির অমলিন ।
একুশ তুমি বঙ্গ জুড়ে যেন যত দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা
একুশ তুমি বীর যোদ্ধাদের রক্তেলেখা স্মৃতিকথা ।।
একুশ তুমি বাংলার বুকেতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাস
একুশ তুমি গড়লে বাংলা বিশ্বজয়েরই ইতিহাস ।
একুশ তুমি যুবকদের মনে এক সংগ্রামী চেতনা
একুশ তুমি না থাকলে বিশ্ব বাংলাকে পেতো না।।
একুশ তুমি বঙ্গভূমিতে যত বাঙালির অহংকার
একুশ তুমি বিশ্ব মাঝারে বাংলা ভাষার অলংকার ।
একুশ তুমি করলে প্রমাণ নয় এই বাঙালি অলস
একুশ তুমি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ।।