Friday, 3 April 2020

সম্পাদকীয়:


সম্পাদকীয়:


উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় আমরা  শিহরিত।আতঙ্কিত।চলছে বাঁচার লড়াই,বেঁচে থাকার লড়াই।আমরা জিতবই।আমাদের মিলিত প্রয়াসে আমরা হাসবই।বিজয়ের হাসি দেখার অপেক্ষায়।চলুন ঘরে থাকি,সুস্থ রাখি।সবাইকে সুস্থ রাখি।করোনাকে পরাস্ত করি।

   এর মাঝেই মাসিক "মার্চ-এপ্রিল সংখ্যা" প্রকাশিত হল।অনেকেই লেখা পাঠিয়েছেন,কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আল্পনার কবিতা।যথাসম্ভব যোগ্য লেখাকে স্থান দেওয়া হয়েছে।পাশে থাকুন।আবারও কৃতজ্ঞতা জানায় 'আল্পনার কবিতার ব্লগজিন"।


বিকাশ দাস(বিল্টু)

সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা

আল্পনার কবিতা

যোগাযোগ:৭৪৭৮৯৭১৩৯৫

biltu03041994@gmail.com

Thursday, 2 April 2020

অনুগল্প

অনুগল্প:

মতিবুল হক-এর একটি অনুগল্প:








                          সাফল্যের পথ 




মাগরিবের আযান হচ্ছে  --" হাইয়্যা আলাছ সালাহ, হাইয়্যা আলাল ফালাহ | বাইক থামালাম | পাশে ক্ষণিকালয় | মুখ্যমন্ত্রীর হাস্যমুখর ছবিখানা চোখে পড়লো |তাড়াতাড়ি  বাইক স্ট্যান্ড করলাম |নামাজের কাতারে দাঁড়াতে হবে | দৌড় লাগাবো এমন সময় একটা গোঙানি |থমকে গেলাম | আযান -গোঙানি --দুইয়ের দ্বৈরথে গোঙানির জয় | পাশে একটা টিনের বাক্স | ওতে হেলান দিয়ে আধমরা হয়ে শুয়ে আছে বছর এগারোর একটি বালক | বুঝলাম বাক্সটিতে রয়েছে ওর সাতরাজার ধন | গায়ে তালি লাগানো  ময়লা পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি | কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম  " কাঁদছো কেন বাপু ?  "
        হাঁপাতে হাঁপাতে এক নিঃশ্বাসে উত্তর দিলো  " মাদ্রাসা ছুটি দিয়েছে পরশুদিন | কী একটা ভাইরাস  ! কী একটা অসুখ ! বাড়ি গিয়ে শুনি আব্বা ছোটমাকে নিয়ে নেপাল ভাটায় গেছে বাড়ির তালা বন্ধ | মাদ্রাসা বন্ধ | ফুপুর বাড়ি গেলাম, ঢুকতে দিলোনা  | বলে তোমার শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে |পরশুদিন থেকে কিছু খাইনি, পকেটে পয়সা নেই | এখানেই পড়ে আছি দুই দিন থেকে |থাকবো কোথায় ? চাচা অসুখটা কি চলে গেছে ?  আজ কি মাদ্রাসা খুলবে ?  বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে  ! "বাইকে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম |
        মাগরিব পড়া হলোনা |  " হে পরওয়ারদেগার, আমায় ক্ষমা করে দিও ! " হাইয়্যা আলাছ সালাহ ,  হাইয়্যা আলাল ফালাহ ---কোনটা সাফল্যের পথ আজও বুঝতে পারলাম না  | কোনটা নেক কর্মের পথ --জানিনা | তুমি তো বলেছো ক্ষুধাতুরকে অন্ন না দিয়ে কখনো খাবেনা  !!!!

   নবনীতা ভট্টাচার্য -এর একটি কবিতা:



        কান্না


রোজ ঝুপকরে সন্ধ্যা নেমে আসে
প্রতিটা অন্ধকার যেন
এক একটি কাব্যমালা
যাকে ছুঁতে চাইলেও
ছুঁতে পারিনা আমি
দিন কাটছে অন্তরীন!

গোটা দেশে লকডাউন
আমি এখন গল্পের খনিতে
আস্তানা গেরেছি।

দূর থেকে মানসাইয়ের শব্দ ভেসে আসে ।
এ তো শব্দ নয় -কান্না!
কবে কারা যেন বস্তাবন্দী
লাশ ফেলে দিয়েছিল একদিন!
নানা একদিন নয় আরো আরো...

সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়।
নাকি সেসব গল্প !
ঘোর লেগে আসে
কতগুলো রাজনৈতিক অন্ধকার
গল্পের খনিতে আটকে থাকে!

        বিনীতা সরকার-এর একটি কবিতা:






               

       মন-ময়ূর



তুমি ছুঁয়ে গেলে মন ময়ূর হয়ে যায়
আবেশে ঘিরে থাকে মন

                            মেলে দিই নীল ডানা আকাশে

তুমি ছুঁয়ে গেলে মন ময়ূর হয়ে যায়
আমি ঘুরে আসি জন্মান্তর

                                ভুলে যাই ঠিকানা নিমেষে

তুমি ছুঁয়ে গেলে মন ময়ূর হয়ে যায়
ফিরে পাই আপন বর্ষা ঋতু

                                    রিম-ঝিম-ঝিম দিনমান

তুমি ছুঁয়ে গেলে, মন ময়ূর হয়ে যায়
মেঘ জমে আসে মন আকাশে

                         আমি ভিজে যাই অঝোর ধারায়
 
তুমি ছুঁয়ে গেলে মন ময়ূর হয়ে যায়
গল্পেরা ভিড় করে আসে

                                         খুঁজে ফেরে অন্তমিল

দীপঙ্কর মুখার্জী-এর একটি কবিতা:(অক্ষমালী)






               ভয়

 

জানি না ব্রাহ্মণ্যরাজ কতটা নিষ্ঠুর ছিল,
কেমন ছিল অস্পৃশ্যতার সে সুতীক্ষ্ণ দংশন।

ফ্যালফ্যালে চোখে কিশোরীর দেবী দর্শনের নিষেধাজ্ঞার কালো রঙ
কতটা ঘনীভূত হতো শ্রাবণধারায়, তাও জানি না।

জানি না সন্তান বুকে তুলে সুধা দেওয়া কোনো মায়ের বুক
এভাবে আর কখনো সংশয়ে দুলতো কি না।

এমন চৈতি রাতে প্রিয়ার সুগন্ধী চুলে সামান্য স্পর্শেও
ভয়ে হিম হতো কি না কোনো বেনীমাধবের আঙুল, তাও জানি না।

শুধু জানি ক্ষণস্থায়ী কোনো মাহেন্দ্রক্ষণে এ ভয়ের
কলস সকলকে নিমেষে শুধুই মানুষ করেছে।
 
এ ভয় অনেকের ঘরের রন্ধ্রে খড় জুগিয়েছে,
ঘুম ভাঙতেই হারিয়ে যাওয়া সংসার থালায় বেড়ে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বহুযুগ পর চেটেপুটে দেখার জন্য।

এ ভয় ফিরিয়ে দিয়েছে সন্ত্রস্ত পক্ষীকূলকে তাদের বড়ো আপনার নিখিল এ ভূবন,
এ ভয় নগর জীবনকে দিয়েছে গাঢ় অপরাজিতা রঙের এক অবারিত আকাশ,
অনন্ত বৃক্ষকূলকে দিয়েছে নির্মেদ শ্বাসবায়ু প্রস্তুতের অফুরন্ত আয়োজন।

করোনাকে দেশত্যাগী করে এ ভয়কে আমি পান করতে চাই আকন্ঠ।

Wednesday, 1 April 2020




সুজিত পাঠক-এর একটি কবিতা:



নির্লজ্জ

       
চেয়ে আছেন মহারাজ,
উদাস দৃষ্টিতে।
বীরত্বের জয়গান যার বধে
ঈশ্বরের সৃষ্টিতে।
সেই তৃষ্ণার্ত মহারাজ,
একটু জলের আশায়
পড়েছিলেন গাড্ডায় আজ।
বড্ড অসহায়।
উদ্ধত অহংকার,
যার শিরায় শিরায়,
অভিধানে নেই যার পরাজয়।
ঈশ্বরপ্রেরিত সুন্দর,
ডোরাকাটা পিঙ্গলদেহে,
পেশীবহুল রাজন্য পরিধানে,
বাধাহীন অরণ্যে।
শিকার বিনা যিনি
করেননি আহার অকারণে,
রাজকীয় বৈভব, তার
বনেদি আচরণে।
গাড্ডায় নিমজ্জিত
ঠায় ।
চেয়েছিলেন ঈশ্বরে
রাজ ব্যবহার পশুদের সমাজে।
পশুরা করেছিল অমর্যাদার
নির্লজ্জ নির্মম প্রকাশ।
এই দুর্দিনে তার আজ।
ভুলে গিয়েছিল ওরা,
তার শিকারের উচ্ছিষ্ট ভাগ
পরে থাকা ভাগাড়ে আসে।
বেঁচে থাকার রসদ
 গবাদির লাশে।
জোটবদ্ধ কপিরা নাচে উল্লাসে।
                     

সুজন ডাকুয়ার কবিতা:







                       লক-ডাউন

                   
                             (১)
আজ বসন্ত কোথায় তবে ফাগুন দিনের রঙিন স্পর্শ
লক-ডাউনের চিত্র এখন থমকে আছে ভারতবর্ষ,
জীবন সুধা নিঙড়ে পড়ে খোলা বোতল আলগা ছিপি
বদ্ধ ঘরে কাব্য লিখি, মৃত্যুদিনের পান্ডুলিপি ৷
                              (২)
তোমরা কেমন ঘরবন্দী সব আমরা তবু হাঁটছি পথে
তোমরা খাবার মজুত করো আমরা বাঁচি কোনোমতে,
বড্ড এখন সন্দেহ হয় দু'দিন পরে বাঁচবো কিনা
আজকে থেকেই উপোস শুরু ইয়ে জিন্দেগী জিন্দেগী না ৷
                              (৩)
বিশ্ব জুড়ে আকাল এখন, নতুন সকাল গুনছে প্রহর
আমার গ্রামে জীবন বাঁচুক বাঁচুক তোমার প্রাণের শহর
মানবসমাজ যতই নিকট হচ্ছে দেখো মৃত্যু খাদের
ততই আওয়াজ হয় জোরালো সাম্যবাদের সাম্যবাদের ৷

খোকন বর্মন-এর একটি কবিতা:



অনিশ্চিত মৌসুমী


লকডাউনের দিনে বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখতে হয় না,
বহুদিন প্রিয় ঠোঁটটির সঙ্গে সম্পর্ক নেই।
এই শীতঘুমের পরে প্রেমিকাও খোসা ছাড়তে পারে ইউক্যালিপটাসের মতো।
গিরগিটির তুলনায় মৌসুমী বায়ুকে বেশি ভয় পাই,
ভয় পাই তোমার জীবনে আসা অনিশ্চিত ফাল্গুনকে।

আমরা কি কখনো প্রেমিক হতে পারব না?
পারব না আমরা কখনো প্রেমিক হতে!


হঠাৎ করেই সম্পর্কের মাঝে কালবৈশাখী বয়ে গেলে হবে না তোমার আমার প্রেমের পহেলা বৈশাখ।
              

রিনা রানী দাস-এর একটি কবিতা:

ঘুষ


ল্যাম্প‌পো‌স্টের নিয়‌নে দুই মাতা‌লের তর্কাত‌র্কি
সাদা জামার মাতাল, অন্যজন কা‌লো পাঞ্জাবী
জামা, পাঞ্জাবী দু‌'‌টোই বিনয় কাকার খ‌ুব সখ
কখনও ম‌নের দা‌মে কো‌নো‌দিন প‌ড়েনি বেভু‌লে

‌পেনশ‌ন ফাইল জমা...জামার প‌কে‌টে বহু‌দিন
আর, ছে‌লের চাকরী...পাঞ্জাবীর হাতা‌লেই ঝু‌লে
মাতা‌লের মাতলা‌মি বে‌ড়ে গে‌ছে রা‌ষ্ট্রের মোড়‌কে
‌জামা, প‌াঞ্জাবীর খো‌পে উদাস বৃ‌দ্ধের লক্ষ্মীপু‌জো

পাঞ্জাবী চায় অগ্রীম। ব‌ন্দি ফাইল ছা‌ড়ে না জামা 
উপায় না পে‌য়ে ছোঁ‌টে প্রান্ত বেলার বৃদ্ধ না‌বিক
জামা‌কে বন্ধক রা‌খে পাঞ্জাবীর শুভ্র সাদা থা‌নে
পু‌রোটা জীবন ‌বেঁ‌চে সোনার হ‌রিণ নি‌লো কি‌নে

কা‌লো আর সাদা যো‌গে ধূসর র‌ঙের খেলা জ‌মে
‌কে এঁ‌কে‌ছে মৃত্যু ভা‌লো...দু'মাতা‌ল ক‌রে তর্কাত‌র্ক

স্বপ্ননীল রুদ্র-এর একটি কবিতা:





সিলেবাস

সিসৃক্ষু ছাত্রের মতো আমি তোমাকে মুখস্থ করি,
পাতা উল্টে উল্টে দেখি অনুচ্ছেদের কেয়ারি করা
ছোট চৌকো ফুল-ক্ষেত, সরু সবুজ লতার জরি
নাকের নথের মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাল ফুলে ভরা

অনুচ্ছেদের তলায় জমিটি বাঁকা, সবুজ ঢাল;
নিবিষ্ট কিছু পিঁপড়ে আর রঙিন পোকামাকড়
রুটমার্চ করে দূরে, শুকনো পাতার আড়ালে কাল
একলা বিকেল বেলায় চলে গেছে খুঁজে নিয়ে দোর

দ্বিধান্বিত ছাত্রের মতন মন দিই পুনঃপাঠে ;
ভাবি একই সিলেবাস থাকে যেন আগামী বছর---
মুখস্থ যাচাই করি, স্মরণযোগ্য স্মৃতিরা হাঁটে
পরীক্ষার দিকে হেঁটে যায় ফলের স্বপ্নে বিভোর

পঠিত বিষয় লিখি, না দেখে নিজেকে রাখছি টুকে
তোমার অক্ষর দিয়ে অন্ধের মতন লাঠি ঠুকে...


কবি সুজিত অধিকারী-এর একটি কবিতা:







তাহাদের চোখ


উত্তরে ক্যামেরা দক্ষিনে চোখ
ডুবে থাকি ডুয়ার্সের বনে
কষ্ট হয় সাতটা হাতি মারা গেল

দক্ষিনে পড়ে আছে তাহাদের চোখ

নীলাঞ্জনা,শুধু দক্ষিনের চোখগুলি সরিয়ে নাও

(কবির "দীর্ঘ ভাঙনের পর আমি আর নদী''কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি কবিতা।কৃতজ্ঞতা কবি অজিত অধিকারী।)

সম্পাদকীয়: